একটি বিষয়ে আমাদের সকলের একমত হতেই হবে ভিন্ন মতের ও ভিন্ন রুচির বহুস্তরকে সম্মান জানিয়েও, যে, আমরা এই মুহূর্তে প্রায়শ্চিত্ত করছি। মানুষ, তার অকারণ অহঙ্কারের শাস্তি পেয়েছে বহুবার। কিন্তু তার পর মানুষ ভুলে গেছে সবকিছুই। মানুষ প্রকৃতির চেয়ে নিজেকে বেশি বুদ্ধিমান মনে করে। যেন বা, প্রকৃতি আছে, মানুষ আছে বলেই। খুব ক্ষুদ্র এবং সীমাবদ্ধ ইন্দ্রিয়ক্ষমতা এবং বৌদ্ধিক ক্ষমতার অধিকারী আমরা। বিজ্ঞান হোক বা দর্শন, গান হোক বা কবিতা, আমাদের সমস্ত কিছুই হল একটা অন্ধকার ঘরে হাত বাড়িয়ে কালো বেড়াল খুঁজে যাওয়ার মতো। হয়তো এই খোঁজার পদ্ধতির একটা রিজনিং তৈরি করতে পারি আমরা। কিন্তু এই খুঁজে পাওয়াগুলি হয় অপ্রত্যাশিতই। আর এই খুঁজে পাওয়ার বেশ কিছুকাল পরে আবিষ্কার করি, যেটুকু খুঁজে পেয়েছি তা আংশিক মাত্র। অপ্রত্যাশিত কিছু করে প্রকৃতি আমাদের জানান দেয়, তোমরা যা জেনেছ, তা সামান্য একটা অংশের অংশ মাত্র। যখন সেটি জানবে, তার পরেই সেই জানাটা যে কত ক্ষুদ্র তা বুঝতে পারবে। অপ্রত্যাশিতর কাছে আমাদের নতজানু হয়ে থাকতে হয়। প্রকৃতির এই অপ্রত্যাশিতকেও আমরা ঈশ্বর নাম দিয়ে নিজেদের মতো করে রূপ দিয়েছি। আমাদের কল্পনায় প্রকৃতি হয়েছে অলৌকিক, ঈশ্বর এবং তাকে ঘিরে তৈরি হয়েছে ধর্ম। প্রকৃতি হেসেছেন। কারণ তিনি এমন একজন কবি, যিনি, ছবি লেখেন, ছিঁড়ে ফেলেন। অথচ এখনও আমরা এই চরম বুদ্ধিমান চরম হৃদয়বান কবি, দার্শনিক এবং বৈজ্ঞানিককে ভালোবাসতে পারলাম না। তাকে আঘাত করেই গেলাম। আঘাতের পর আঘাত। পুড়িয়ে দিলাম লক্ষ লক্ষ গাছ। আমাদের নগরসভ্যতার হাইওয়ে চলল প্রকৃতির বুকের উপর দিয়ে। প্রকৃতি আর সহ্য করতে পারছিলেন না। মানুষের বুদ্ধিবৃত্তি সম্পর্কে তাঁর ধারণাই আছে। ফলে, আজ আমাদের এই দশা।
অবস্থাটি যা দেখা যাচ্ছে, তার চেয়েও ভয়ংকর সন্দেহ নেই। কারণ করোনা ভাইরাস বা কোভিড-১৯ এর সঙ্গে সঙ্গেই আসতে চলেছে দুর্ভিক্ষ। চল্লিশ কোটি মানুষ কাজ হারাতে চলেছেন। সেই সঙ্গে বিপন্ন হতে চলেছে তাঁদের পরিবার। আমরা ঠিক খিদে বুঝিনা। আমরা যুদ্ধও দেখিনি। ডিস্টোপিয়া কাকে বলে, তা মেধা দিয়ে বোঝার চেষ্টা করেছি আর ফিল্ম দেখে। কিন্তু সেই ডিসটোপিয়াই এখন আমাদের দরজায় কড়া নাড়ছে।
তবু, বলব অবস্থাটি এতটাও নিরাশাজনক না হলেও হতে পারে। বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধের কথা ভাবুন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ, মন্দা, মন্বন্তর, প্লেগ, মহামারী, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ইত্যাদি ইত্যাদি। ধ্বংসের মুখোমুখি আমরা তখন কী করেছি? একদিকে যখন ধ্বংস হয়ে চলেছিল মানবসভ্যতা, আরেকদিকে তেমনি, একটার পর একটা কালজয়ী সাহিত্য, চিত্রকলা, কবিতা রচিত হয়েছে। নাটক রচিত হয়েছে। ফিল্ম নির্মিত হয়েছে। মানুষ খুঁজে পেয়েছে নতুন করে বলার ভাষা। ধ্বংসস্তূপের উপরে দাঁড়িয়েই।
ওপর ওপর মৃদু দার্শনিকতা, ভাসা ভাসা বিষাদ আর সংকটবিহীন চর্বিতচর্বণের সময় হয়তো শেষ হয়ে এলো। মানবসভ্যতা টিকবে কিনা জানি না। কিন্তু টিকলে, এবার আমাদের সৃজনের ইতিহাস অন্য ভাবে রচিত হবে।
দীর্ঘদিনের অচলাবস্থা কাটিয়েই। এটুকুই এই চরম অন্ধকারাচ্ছন্ন সময়ের আশাবাদ।
বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা। নতুন বছরে সব অন্ধকার কেটে যাক, এটাই প্রার্থনা।
হিন্দোল ভট্টাচার্য
সম্পাদকীয় দপ্তর-- বেবী সাউ হিন্দোল ভট্টাচার্য মণিশংকর বিশ্বাস সন্দীপন চক্রবর্তী শমীক ঘোষ
abahaman.magazine@gmail.com
@ 9051781537
সত্য সব সময় সত্যি
ReplyDeleteLovely ��
ReplyDelete