Monday, April 13, 2020

সঞ্চালিকা আচার্য-এর কবিতা





প্রভাতী-বিষয়ক

১।
স্মৃতিদের ভাঁজ থেকে উঠে আসে কামুক কুয়াশা,
সুনিপুণ ক্যালিগ্রাফিতে সাজিয়ে রাখে স্বেচ্ছাচারিতার ইতিহাস কোনো।  
ঘুমের মধ্যে ঝরাপাতাদের শরীর থেকে মুছে দিলাম বিয়োগচিহ্ন।
জেহাদির ঠোঁটে রেখে আসি পায়রার শুভ্র পালক। 

তবু সারা রাত চাঁদ-কে ঢেকে রইলো অব্যবহৃত শব্দের মেঘ।
পায়ের কাছে সাদা পাতা।  

অতঃপর ভোরবেলায় বৃষ্টি থামার আওয়াজে ঘুম ভাঙলে দেখি,
রোবটেরা কান পেতে পাখিদের গান শুনছে।


২।
এখন কল্পনাকে নগ্ন করে দাও।

যত রাস্তা খোলা ছিলসবই তোমার ঠোঁটে আলতো লেগে থাকা হাসির মধ্যে ঢুকে গেছে কাল রাত্রে। বেহায়া ভোরের হাল্কা গোলাপি জিভ তবু ছুঁয়ে দেয় চোখের ঢাকনাআলগোছে। জল মুছে আরও একটা দিন শুরু হয়।  

কিছুই না জেনেবা সামান্যই জেনেঘুরিয়ে ঘুরিয়ে সেই দিনটিকে আমরা একটা যন্ত্রের রূপ দিয়েছি। ঘষ্টাতে ঘষ্টাতে দুপুর গড়ালে এঁটো বাসন মেজে বাড়ি ফিরে যায় রাজিয়া বিবি। আর সেই নিষিদ্ধ দুপুরে চুলে স্পাইক করা জিগোলো পৌঁছে গিয়েছে সদ্যবিধবা দ্রুপদকন্যার ফ্ল্যাটে। সমস্ত শোক-কান্না লেগে থাকা বিছানার চাদর গতকালই ধুয়ে ফেলা হয়েছে।  

ওই বাড়িতে কলিং বেল বাজছে যখনতারই মধ্যে বাংলার সমস্ত খেত থেকে শুকনো ধানের চারা উপড়ে ফেলেছে চাষি। এরপর সূর্য কিছু ম্লান হলে দিনটিও গলে আরও একটা পিজিওন-হোলে ঢুকে যায়স্মৃতির অতলে। রাত নামলে এক ঘুম থেকে আরেক ঘুমে চলে যাই আমরা। সবুজ আলোর জোনাকিরা বৃষ্টিতে ভিজে সম্পূর্ণ অন্ধকার হয়ে যায়রোজ।  

জাগর ও ঘুমের মধ্যে কল্পনা নগ্ন ঘোরে। বাইরে পটবদল হয়।   


৩।
এইটুকু ছুঁয়ে থাকার মধ্যে কোনও পাপ নেই।

এই যে কখনো একসাথে থাকা হল না, এই যে দুটো অদৃশ্য হাত তবু ধরা আছে, এই যে আরও দুজোড়া হাত স্পর্শকাঙাল, এইসব ছোঁয়াছুঁয়ির মধ্যে কোনও পাপ নেই

অসহ্য তাপ আছে শুধু; সামান্য পাওয়া আর অজস্র চাওয়ার আগুন আছে। কেউ নিজে পোড়ে, আর কেউ অন্যকে পোড়ায়। 

হাজার মাইলের ব্যবধান আছে। দেহযানে হাজার বছরের যাত্রা। তবু আসাধার মাত্রাজ্ঞান এজন্মের মতো শুধু বালিশে নুন আর ইনসমনিয়ার দাগ ছাড়া আর কিছু দেয়নি।  

এই নেক্রপলিসে তবু এক ঝাঁক স্বপ্নের মতো নতুন দিন আসে। বাতাসে ভাসে ইরসের আশীর্বাদী আঁশগুঁড়ো। দ্য সিক্সথ সেন্স’-এ স্যাক্সোফোন বেজে উঠলে গাছদেহ ঘিরে মৃদঙ্গ বাজে।

এইসব কূজনের মাঝেই কোথাও সর্বনাশী অথৈ জলের ওপর একটা টেবিল আজও ভাসছে। তার ওপর কিছু কবিতার বিবর্ণ পঙক্তি, অ্যাশট্রে-তে আধখাওয়া সিগারেট, আর কফি-মাগের রিমে ঠোঁটের দাগ। সেই টেবিলে একটি একান্ত ভোরবেলা বন্দি হয়ে আছে।    

এইসব অক্ষর, ছাই, দাগ ও ভোরে কোনও পাপ লেগে নেই। 

No comments:

Post a Comment

একনজরে

সম্পাদকীয়

একটি বিষয়ে আমাদের সকলের একমত হতেই হবে ভিন্ন মতের ও ভিন্ন রুচির বহুস্তরকে সম্মান জানিয়েও, যে, আমরা এই মুহূর্তে প্রায়শ্চিত্ত করছি। মানুষ...

বেশিবার পড়া হয়েছে যেগুলি