Monday, April 13, 2020

নভেরা হোসেনের কবিতা





জন্মদিনের মধ্যরাতে মরচেপড়া পেরেকের গান
জন্মদিনের মধ্যরাতে মরচেপড়া পেরেকের গান কত কথাইতো মরীচিকাভ্রমেবাহন বিষয়ক জটিলতা একজনে সহস্র তুমি একজন কফিনে নিঃসাড়অন্যজন খুঁজে ফেরে নিধুবন আরও যারা বাসে যেতে যেতে  কাচ হয়ে আটকে থাকে বাকা ছাদের ধূসরতায়তারা সব কোথায় আজনজ্দের বুকচেরা দীর্ঘশ্বাস মরুর বাতাসে  দেবলীনা কতকাল অপেক্ষায়ঘরে ঢুকবার তাড়ায় ভুলে যায় তালায় চাবি দিতে শরীরহীন দর্শক এক ঢুকে পড়ে ইদিপাসের বুকের খাঁচায়খুলে খুলে খায় লালাভ কশেরুকা সেও এক কার্নিভোরাসচাকু দিয়ে কেটে খায় গম রঙের ত্বকশোভা আগুন পোড়া শ্বেত স্রাব গড়িয়ে পড়ে সঙ্গমের রাতে;  তারপরেই নিদারুণ ক্লান্তি ঠোঁটেজিভে তীব্র কামনার উত্তাপে উৎসর্গিত শিল্পীর অপ্রেম

উষার ক্রন্দন
কালো সূর্যের সকালধোঁয়াশা ছেয়ে আছে পথের শীর্ষে ডাবলডেকারমিশুকরণপাঅলা দৈত্যেরা সব একাকার ধূসর ল্যান্ডস্কেপে একটাই ছবি আঁকছে যেন শিল্পীর তুলি লেভিস্ট্রসমিঁয়াসোগডেলিয়ার মস্তিষ্কের ডান প্রকোষ্ঠে গাঁথা তোমার হাত ছুঁয়ে আছে বরফ ঠা- হাতকে তবু কোথাকার কোন্ আমরা কোথায় যেন চলে এসেছি আমাদের পায়ের নিচে সিংহের সোনালি মুখকোনো বেদেনির কবরীর রক্তিম ফুল সন্ধ্যামালতী ফুটে থাকে আকাশের ছাদে পা-ভাঙা একটা চড়ুই ঘুরে বেড়ায় শিশুর করতলে
দুই দুই যুগ অক্টোপাসের শরীর ছেঁড়া পিতাভ রক্তস্রোত প্রবাহমান সুষুম্নাকাজুড়ে চুমুকে চুমুকে ব্রান্ডি তন্দ্রাচ্ছন্ন পদ্মার পাড়ে ত্রিশঙ্কু তুমি এয়ারপোর্ট থেকে নেমেই নাকে এসে লাগল তীব্র সর্পগন্ধা জন্মভূমে ফিরে গিলে খাও আস্ত আস্ত আগুনের গোলা নদীর আত্মা এসে বলেঅয়ী আনন্দময়ীঅয়ী হেরুকের বীণাবাজো তুমি ঝুমুর ছন্দে তারপর কতশত রক্ত নদীধর্ষিতার গান-রনচ- হয়ে ফিরে আসে কাচের শরীরে
তোমার হাতের নিচে খেলা করে কয়েক লক্ষ অক্টোপাস দুপুরের পথে পথে হিরার টুকরো ঝিরঝিরে মিহি বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়ছে তোমার শরীরে শরীরে এক অনুভূমিক দেয়ালখদুজনের মাঝে এই কি সেই ভোর যার বিকাশ অস্তগামী সূর্যের পানেআমার সকল রাত তোমার পাঁজরের নিচে লম্বমানআকাশে সব উড়ক্কু মাছ পথে পথে চিক চিক বালুর স্রোত তুমি কি শহরের প্রান্তে শুয়ে থাকা সহস্র প্রত্যাখানের অবিশ্বাসে?
ওম শান্তি ওম!

দুটি চোখ ঘুরে বেড়ায় স্কন্ধহীন ছায়ার আদলে
প্রতিদিনের মতো নয় আজ অন্যদিনের মতোঅন্য  দিন নিঃশব্দতার শব্দ  ঘাস ফুলের মতো কোমল প্রেম আর প্রেমহীনতার স্রোতে আরও একটি দিন রাবণের দশমাথা নিউরনেনিউরনেকরাত কাটার শব্দ দমকা হাওয়ার গতিতে তিন চাকার ক্রেঙ্কারধ্বনি  বরফ গলা বাতাসের স্পর্শে নিরাভরণ গন্তব্যে পৌঁছাতেই না দেখা পৃথিবীর মানুষেরা সবঅচেনা মানুষ দৃশ্যমান পৃথিবীর বুকে পাথর একটা চাপা দেয়া ছিল বহুকাল আগেএক পশলা বৃষ্টিতে সরে সরে যায়এক তুফানে দৃঢ় রয় গন্তব্যহীন পথে পা ফেলছে টলোমলোভেতরে কি কোনো আলোকরশ্মি একটু দেখা দিয়ে অদৃশ্যএকটু ছোঁয়া দিয়ে টেনে নেয় দরজাচিরদিনের জন্য অবরুদ্ধ দ্বার চায়ের ব্রাউন লিকারে মাথা গলাতেই কাচের এপারে ভিসুভিয়াসআচমকা লাভার উদগিরণকাচের ঘর ভেসে গেল উত্তপ্ত লাভায় শরীর গলে গলে পম্পেইভিসুভিয়াস ঢেকে যাচ্ছে আদলহীন অবয়ব সব আধ হাত দূরে চেয়ারে বসে উন্মনা তুমিহাতের যন্ত্র বার বার ডেকে নেয়মুহুর্তে বদলে যায় নির্লিপ্ত চোখ হাজার বছরের মমি জীবন ছেড়ে বেরিয়ে এলো আরও একজন মমিএকজনের জন্য যে মৃৎ সকলের জন্যই সে মৃৎমৃৎ চোখ কথা কয় মৃতের ভাষায় ভিসুভিয়াস জ্বলে পুড়ে নিভে যায়গিলে খায় তরল লাভা জলরঙ্গে আঁকা প্রাচীন নগর উজ্জয়িনী বাসুদেব আর নগরনটীর আট্টাশকলাগুরুদেব বাৎসায়ন  কলা অচেনা এক উনত্রিশ কলা কামদেবও তার খোঁজ জানে না নিজ শরীরে ছন্দময় সন্তুরের ঝংকার মনিশ রায় কত রাত হলো আজ ?  পারে ব্রহ্ম্যদৈত্য গিলে খায় নিঃশব্দতার শব্দ শবদেহ ঝুরঝুরে গড়িয়ে পড়ে মসৃণ মার্বেলেদুটি চোখ  ঘুরে বেড়ায় স্কন্ধহীন ছায়ার আদলে

No comments:

Post a Comment

একনজরে

সম্পাদকীয়

একটি বিষয়ে আমাদের সকলের একমত হতেই হবে ভিন্ন মতের ও ভিন্ন রুচির বহুস্তরকে সম্মান জানিয়েও, যে, আমরা এই মুহূর্তে প্রায়শ্চিত্ত করছি। মানুষ...

বেশিবার পড়া হয়েছে যেগুলি