যমরাজের দূত
-"ও ঠাকুমা কাঁদছ
কেন?" ঘুম থেকে উঠে নিচের ঘরে এসে ঠাকুমাকে জড়িয়ে ধরে জানতে চাইল পারুল।
ঠাকুমার
কান্না আর থামে না। তার সাথে সমানে বিড়বিড় করে কী যেন বলে চলেছে।
-"আরে পরিষ্কার করে
বলবে ঠিক কী হয়েছে?"
-"যমরাজ দূত পাঠিয়েছিল
কাল আমাকে নিয়ে যেতে" কাপড়ের খুঁটে চোখ মুছল ঠাকুমা।
-"কী বলো গো? অমনভাবে
আবার দূত পাঠায় নাকি? স্বপ্ন দেখেছ কোন।"
-"নারে স্বপ্ন নয়।
রাতে তোরা শুতে চলে গেলি উপরে। আমি আলো নিভিয়ে মশারি গুঁজে ঢুকে গেলাম বিছানায়। হঠাৎ
মাঝরাতে ঘরের মধ্যে দেখি কে যেন টর্চের আলো ফেলছে এদিক ওদিক। জানতে চাইলাম 'কে? কে
ওখানে? বুলা? পারুল? মানিক তুই নাকি?' প্রথমে কোন উত্তর নেই তারপর যখন আমি উঠে বসতে
যাব, বলল 'শুয়ে পড়ুন। যমরাজের দূত এসেছি নিয়ে যাব ব'লে'। ঘরের মধ্যে খুটখাট কত শব্দ
হতে থাকল। বুঝলুম মশারির দড়ি খুলতে চাইছে। বললাম 'বাবা আমার এখনই যাবার সময় হয়ে
গেল? আরেকটু থাকতে দিলে হত না? এবারের শীতে একটু নতুন নলেন গুড়ের সন্দেশ খাব মন চাইছিল। খেতে দেবে
না! নিয়ে চলে যাবে?' সাড়া দিল 'হুম'। জানলার পাশের আলমারির দরজাটা খোলার শব্দ পেলাম,
বুঝলাম ভালো কাপড় পরে যেতে হবে। দূত জানাল 'ফাইনাল অর্ডার হয়ে গেছে, ফাঁকা হাতে যাওয়া
যাবে না, মানসিক ভাবে নিজেকে তৈরি করে নিন'। কান্না পেল খুব, বললুম 'কতই-বা বয়স হল
আমার, এখনো যে পারুলের বিয়ে দেখা বাকি'। মানতে চাইছিল না; বলল 'যেতে হবেই তেমন হলে
শেষবারের মতন এই বিছানায় আরেকটু ঘুমিয়ে নিন, তারপর তুলে নিচ্ছি'। 'ঘুম কী আর আসে বাবা?
আর ক'দিন থাকতে দেবে না? দেখো না একবার যমরাজকে ব'লে', কাতর অনুনয় করতে থাকলাম। 'আচ্ছা,
আচ্ছা দেখছি' ব'লে হঠাৎ টর্চের আলো নিভে গেল ঘরে আর কোন শব্দ পেলাম না। আমার এবার সত্যি
সময় ফুরিয়েছে পারুল, যমরাজ একবার আমায় নিতে পাঠিয়েছে মানে আবার আসবে। আমি আর বাঁচব
না রে" হাউমাউ করে কেঁদে উঠল ঠাকুমা।
-"কী বলছ ঠাকুমা?
তোমার মাথাটা ঠিক আছে তো?" পারুল উঠে পড়ে এদিক ওদিক দেখতে শুরু করল। ঠিক তাই।
যা সন্দেহ করেছে তাই ঘটেছে টেবিলে বাবার ঘড়িটা নেই, একি! বারান্দায় তার নতুন সাইকেলটাও নেই। ছুটে এসে
আলমারি খুলে দেখে ঠাকুমার সাদা কাপড়গুলো ছাড়া আর কিচ্ছু নেই। দৌড়তে থাকল সিঁড়ি দিয়ে চ্যাঁচাতে চ্যাঁচাতে
'বাবা? মা? কাল রাতে বাইরের মেন দরজা বন্ধ করোনি কেউ? চোর এসে সব চুরি করে নিয়ে গেছে।'
No comments:
Post a Comment